জে, জাহেদ :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের হাতে নগদ রয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে নগদ রয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর কোনো ধরনের ঋণ নেই। ব্যাংক বা কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের কোনো ব্যক্তিগত ঋণ না থাকলেও, ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৭ টাকার কার ঋণ রয়েছে।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের রয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৫ টাকার ঋণ রয়েছে। এসব ঋণের মধ্যে উত্তরা ফিনান্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ৩ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা ও ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকার অন্যান্য ঋণ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে কখনও কোনো ধরনের মামলা দায়ের হয়নি। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে একটি মামলা দায়ের হলেও ২০০৮ সালে তিনি আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন জর্জরিত মামলায়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ৪৮টি ফৌজদারি মামলা। এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন রযেছে। কয়েকটি মামলার কার্যক্রম আদালতে স্থগিত রযেছে এবং একটি মামলায় আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানের কাছে দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বাৎসরিক আয় হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন: বাড়ি, দোকান ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ আয় ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, তার উপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা বাবদ আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অন্যান্য ফার্মের শেয়ার আয় ২০ হাজার ১০০ টাকা, তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ৫০ হাজার ৩০০ টাকা।

রেজাউল করিম চৌধুরীর নগদ অর্থের পরিমাণ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা, স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকা মূল্যের প্রাইজবন্ড রয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রয়েছে ৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি কার, বিবাহ সূত্রে পেয়েছিলেন ২০ তোলা স্বর্ণ যার মূল্য ৫০ হাজার টাকা এবং স্ত্রী পেয়েছিলেন ৩০ তোলা স্বর্ণ যার মূল্য ৬০ হাজার টাকা, বিবাহ সূত্রে পাওয়া ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ১ লাখ টাকার।

রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজে মূলধন ২ লাখ টাকা এবং ফার্মের মূলধন ১০ লাখ ৬ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক্সে মূলধন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ফার্মের মূলধন ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা এবং জামানতবিহীন ঋণ হিসেবে প্রদত্ত ৪ লাখ টাকা, তার অকৃষি জমি রয়েছে ২ গন্ড তবে এর মূল্য উল্লেখ করা হয়নি, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির উপর চারটি অ্যাপার্টমেন্ট যার মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ, ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনী হলফনামায় বাৎসরিক আয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন: বাড়ি, দোকান ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ আয় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা, পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা আইন, পরামর্শক) থেকে আয় ১৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা, হাতে নগদ অর্থ রয়েছে ১৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা।

বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা, ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা কার, ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ভি-৭৩ মডেলের জিপ, স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ৭৫ হাজার টাকার।

ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ৭৫ হাজার টাকার, ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল ও ট্রিটমেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা, অকৃষি জমি রয়েছে ১৮ শতক (মূল্য ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা) ও ১.৫ কাঠা (মূল্য ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা), আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন যার মূল্য ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে একটি যার মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।

ডা. শাহাদাত হোসেনের রয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৫ টাকার ঋণ রয়েছে। এসব ঋণের মধ্যে উত্তরা ফিনান্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ৩ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা ও ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকার অন্যান্য ঋণ রয়েছে।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪২২ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ১০ লাখ ২০ হাজার, নিজ নামে স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ২৫ হাজার টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ২৫ হাজার টাকার।

সোলায়মান আলম শেঠ বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বছরে আয় করেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ টাকা, ব্যবসা থেকে বছরে আয় হয় ১৪ লাখ ৮১ হাজার ১৩০ টাকা, চাকরি ও সম্মানী ভাতা বাবদ আয় করেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সোলায়মান আলম শেঠের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জমি ও খাগড়াছড়িতে জমি। এসব জমির সুনির্দিষ্ট পরমিাণ উল্লেখ না থাকলেও মূল্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে: পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত জমির মূল্য ১৪ কোটি ৫০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৮ টাকা এবং খাগড়াছড়ির জমির মূল্য ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

তার রয়েছে ১টি বাসসহ ১৩টি গাড়ি যার মূল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সোলায়মান আলম শেঠের কোনো ব্যক্তিগত ঋণ না থাকলেও, ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৭ টাকার কার ঋণ রয়েছে।